প্রত্যয় নিউজডেস্ক: সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমেদ (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহতের পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যেতে বলেছিলেন রায়হান। তবে পুলিশ বলছে, গণপিটুনিতে আহতাবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
নিহত রায়হান আহমেদ সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার মৃত হবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ করে রায়হানের হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবি জানান। এ সময় সড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
রায়হানের মামাতো ভাই আবদুর রহমান বলেন, শনিবার (১০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা থেকে বাইরে বের হন রায়হান। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ ছিল না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে তার রাত ১২-১টা হতো। তবে ওই দিন আর বাড়ি ফেরেননি। রোববার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তার বাবা (সৎ বাবা) মো. রফিকুল ইসলামকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যেতে বলেছিলেন রায়হান।
তিনি বলেন, আমরা রায়হানের পায়ে একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হাতের কয়েকটি নখ উল্টানো ছিল। তাকে পুলিশই নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ফোন পেয়ে কিছু টাকা নিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়ার পর সেখানে এক পুলিশ সদস্য ছিলেন। তিনি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে ফাঁড়িতে যেতে বলেন। সে সময় ১০ হাজার টাকা সঙ্গে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। ওই পুলিশ সদস্য বলেছিলেন, যারা রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তারা ফাড়িতে নেই, সবাই ঘুমিয়ে গেছেন। সে সময় রায়হানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও দেখা করতে দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যে নম্বর থেকে ফোন দেয়া হয়েছে ওই নম্বর সম্ভবত পুলিশ সদস্যের। ওই নম্বরে এখন যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরছে না।
রায়হানের মামাতো ভাই আবদুর রহমান জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে যাওয়ার পর ‘রায়হান ফাঁড়িতে নেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছে’ বলে জানানো হয়। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর রায়হান মারা গেছেন বলে জানা যায়। সে সময় তার লাশ হিমাগারে ছিল।
আবদুর রহমান অভিযোগ করেন, রায়হানকে পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। তবে পুলিশ বলেছে গণধোলাইয়ে মারা গেছে। তার গায়ে তেমন আঘাতের চিহ্ন নেই। আমরা তার পায়ে একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হাতের কয়েকটি নখ উল্টানো ছিল। তাকে পুলিশই নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার চাই।
রায়হানের নামে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি ছিনতাই ও একটি মাদক মামলা রয়েছে, এমন তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাগজপত্রে দেখা গেছে, রায়হানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, আর মৃত্যু হয় ৭টা ৫০ মিনিটে।
সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মিত্র বলেন, যে মুঠোফোন নম্বর থেকে যুবকের পরিবারকে ফোন দেয়া হয়েছিল, সেটি কার ফোন সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। নিহত যুবকের নামে কোতোয়ালি থানায় ছিনতাই ও মাদকের দুটি মামলা আছে। এসব বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ওই যুবককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। এর আগে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মরদেহের ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।